,

করোনা আতঙ্কে কর্মজীবনে স্থবিরতা: এনজিও’র কিস্তি নিয়ে দিশেহারা মানুষ

লিয়াকত হোসেন (লিংকন): করোনা ভাইরাস আতঙ্কে মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়ছে। হাট-বাজারে কমে গেছে মানুষের উপস্থিতি। আতঙ্ক আর ক্রেতার অভাবে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ক্রমেই দিনমজুর, শ্রমজীবি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে বাড়ছে হতাশা।

এরপরও আবার কিস্তির জন্য তাড়া করছেন এনজিও কর্মীরা। একদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক, আর অন্যদিকে এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকার বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কাশিয়ানী উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা কেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা হোক এমনটাই দাবি ঋণগ্রহীতাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাশিয়ানী উপজেলায় ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, সিএসএস, জাগরণী, আর আর এফ, পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি, টিএমএসএস, আরডিবি, প্রশিক্ষা, গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টা, রিকসহ বেশ কয়েকটি এনজিও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনা ভাইরাস উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোরেই এসব এনজিওর কয়েক শ’ কর্মী বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য বেড়িয়ে পড়ছেন। এতে এনজিওকর্মী ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ দুঃসময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুরী পরিবারগুলোর উপর এনজিও’র কিস্তির টাকা যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিস্তির টাকা নিয়ে ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে এনজিও কর্মীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাত-পা ধরেও রেহাই পাচ্ছে ঋণগ্রহীতারা। কিস্তির টাকার জন্য এনজিওর কর্মীরা গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়ার এবং ভবিষ্যতে ঋণ দেওয়া হবে না এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে কিস্তির টাকা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ দুঃসময়ে কর্মহীন মানুষ কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে স্থানীয় সুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করছেন। আবার অনেকে এনজিও কর্মীদের ভয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

উপজেলার রামদিয়া বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে লোকজনের উপস্থিতি একেবারেই কম। কেনাবেচা একেবারেই নেই। সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। অথচ এনজিও’র লোকজন এসে কিস্তির টাকা জন্য চাপ দিচ্ছেন।’।

ঘোনাপাড়া গ্রামের শিখা বেগম জানান, ‘তার স্বামী একটি ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে মালিক দোকানের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও এনজিও’র সাপ্তাহিক কিস্তির ৮শ’ টাকা অন্যের কাছ থেকে ধার করে তিনি কিস্তি পরিশোধ করেছেন।’

উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল গ্রামের জোছনা বেগম বলেন, ‘রাত পোহালেই কিস্তির জন্য এনজিও কর্মীরা বাড়িতে চলে আসেন। যতক্ষণ টাকা পরিশোধ না করা হয় ততোক্ষণ এনজিও কর্মীরা বাড়ী থেকে যেতে চান না।’

কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান খান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই এ দুর্যোগকালে এনজিও’র কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা উচিত মনে করি।’

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোন ধরণের নির্দেশনা পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আজ কথা বলবো।’

এই বিভাগের আরও খবর